ঢাকা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ১০:১৯ pm

পদার্থবিদ্যার মজার কথা (২য় খন্ড)

| ৯ চৈত্র ১৪১৯ | Saturday, March 23, 2013

পদার্থবিদ্যার মজার কথা (২য় খন্ড) -ইয়াকভ পেরেলম্যানবাংলা অনুবাদ সংস্করণ সম্পাদনা ২০১৩
ভূমিকা

সায়েন্স ফিকশন সাহিত্যে অসম্ভব আকর্ষণীয় একটি শাখা। বিকাশমান। স্বল্প সময়ের ইতিহাসে সভ্যতায় ও বিজ্ঞানে এর অবদানের কথা বিচার করলে বিস্মিত হতে হয়। তরুণ সমাজে সায়েন্স ফিকশনের ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে, যার প্রতিফলন ঘটেছে ফিল্ম, টিভি প্রোগ্রাম, কমিক বইগুলোতে। বিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী কার্ল সাগান বলেছেন, স্কুল-কলেজের পাঠক্রমে পরিকল্পিতভাবে সায়েন্স ফিকশন বিজ্ঞান ও রাজনীতির অখণ্ড অংশ হিসেবে থাকলে তা সমাজে সুদূরপ্রসারী উপকারী ভূমিকা রাখবে। জুল ভার্ন, এইচ. জি. ওয়েলস, আলেক্সান্দার বেলায়েভ, এডগার রাইস বারোজ, আর্থার সি. ক্লার্ক, জন ডব্লিউ ক্যা¤পবেলের মতো কল্পবিজ্ঞান লেখকদের বই যে বিজ্ঞানে আগ্রহী এক প্রজন্ম তৈরি করেছে তা অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদের স্বীকারোক্তি থেকে বুঝতে পারি। বিজ্ঞান ও শিল্পের ব্যাখ্যাকার জ্যাকব ব্রনোওস্কির ভাষায়, ‘বিজ্ঞান ও সাহিত্যের সমন্বয় ছাড়া কোনোভাবেই একটা সভ্যতা সামনে এগোতে পারে না। কারণ এই সমন্বয় মানবিক বোধগুলোকে তরান্বিত করে, এই বোধ ছাড়া সমাজ সুসংগঠিত হয় না।’ এটা ভেবে বিস্মিত হতে হয় ইয়াকভ পেরেলম্যান বিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকে অর্থাৎ ১৯৩৬ সালে পদার্থবিদ্যার ‘মজার কথা’ বইটির পঞ্চম সংস্করণে আমূল এক পরিবর্তন আনেন। যাতে বইটির খণ্ডদুটো চিরায়ত এক গ্রন্থের রূপ পায়। সেখানে বিজ্ঞান ও সাহিত্যের মেলবন্ধনে এই মানবিক বোধের প্রকাশ ঘটে। ভাবতে অবাক লাগে বইটির প্রথম সংস্করণের কাজ শুরু করেছিলেন ১৯১১ সাল থেকে। যখন পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা পরমাণুর গঠন রহস্য উদঘাটনের গবেষণায় মগ্ন। পথ দেখাচ্ছেন চিরকালের নীলস বোর।
পেরেলম্যান এই সংষ্করণে যেমন কল্পবিজ্ঞানের কিংবদন্তী জুল ভার্ন, এইচ জি ওয়েলস কাহিনীর বর্ণনাই দেননি, মার্ক টোয়েনের মতো সাহিত্যিকদের রচনা থেকে উদ্ধৃত করেছেন। সে উদ্ধৃতিগুলোকেই বেছে নিয়েছেন যেগুলো শুধু পাঠককে আগ্রহী করবে না, পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকও হবে। ‘পদার্থবিদ্যার মজার কথা ১ ও ২’ বই দুটো শুধু বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং এমনসব উদাহরণ আছে যেগুলো পড়লে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আমাদের সোজা হয়ে দাঁড়াতেও উদ্বুদ্ধ করবে। খুব খেয়াল করে না দেখলে অবিরাম গতিযন্ত্রের দর্শক কিরকম ফাঁদে পড়েছিল কিন্তু বৈজ্ঞানিক যুক্তি সেই ফাঁদ থেকে বের করেও এনেছে। অথচ ১৮৭০ এর দশকে এই রহস্যময় ঘূর্ণন দেখে অনেকে বিশ্বাস করে ফেলে যে, আমাদের দেহের কিছু অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা আছে। বিজ্ঞানসম্মত ধারণা না থাকলে কতরকম ফাঁদে পড়তে হয় তার অসংখ্য উদাহরণ আছে আমাদের দেশেও।
ইয়াকভ পেরেলম্যান বলেছেন- ‘আমার উদ্দেশ্য ভিন্ন, প্রধানত, পদার্থবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে বৈজ্ঞানিক ধারায় তোমাদের ভাবতে শেখান এবং প্রতিদিনের জীবন থেকে বিভিন্ন রকমের জিনিসের সঙ্গে সম্পর্কিত যা কিছু তা জড়ো করা।’ যা তিনি সম্পূর্ণ সফল হয়েছেন। দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতাকেই পদার্থবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছে এই বই। তাই বইটি পরিবর্তন করার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলা সংস্করণ সম্পাদনা-২০১৩ এ বিষয়বস্তুকে ঠিক রেখে ভাষা, চিত্র ও বক্তব্যকে সাবলীল করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিচ্ছেদের শুরুতেই প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞানী ও লেখকদের ছবি বসানো হয়েছে আরো ব্যাপক পাঠককে আকর্ষণ করার জন্য। সেখানে তাদের বিবৃতি-পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। বইটির শেষে পেরেলম্যানের জীবন সম্পর্কে কিছু কথা বলা হয়েছে। এটা ভাবতেই ভাল লাগছে বইটি খুলে একজন বিজ্ঞানপাঠক মার্ক টোয়েন, নিকোলাই গোগলের ছবি দেখতে পাবে, দেখতে পাবে জুল ভার্ন, এইচ. জি. ওয়েলস এর ছবি। সেইসাথে প্রতিথযশা সব বিজ্ঞানীদের।
এটা শুধু তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান নয় ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞানের বই হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখানে বর্ণিত আছে যা ঘরে বসেও পাঠক করতে পারবে। এ রকম বিষয়ভিত্তিক এবং সরল উপস্থাপনের বিজ্ঞান বইগুলোকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ডিসকাশন প্রজেক্ট একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। যে বইগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে সেগুলোর প্রয়োজনীয় সম্পাদনাসহ প্রকাশের ব্যবস্থা করবে। সেইসাথে নতুন বিজ্ঞানের বই লিখবে বিজ্ঞানকর্মীরা। এ ব্যাপারে প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপিও এগিয়ে এসেছে স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থান নিয়ে। ডিসকাশন প্রজেক্ট দীর্ঘ ২০ বছর বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এবার বিজ্ঞান বক্তৃতার পাশাপাশি প্রকাশিত বইগুলোকে নিয়ে দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে ছুটে যাবে বিজ্ঞানের বার্তা পৌছে দিতে। বিজ্ঞান অন্ধকারের প্রদীপ। আসুন এ প্রদীপের আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেই। জ্ঞানই হোক আমাদের গন্তব্য।

তাম্রলিপি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলা অনুবাদ সংস্করণ সম্পাদনা
মূল বাংলা অনুবাদ: সিদ্ধার্থ ঘোষ
বাংলা অনুবাদ সংস্করণ সম্পাদনা: আসিফ
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৩
মূল্য: ৩০০ টাকা
পৃষ্ঠা: ২৮০
প্রচ্ছদ: যোয়েল কর্মকার
ISBN: 984-70096-0193-7