ঢাকা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ৬:৪৯ pm

গ্যালিলিও গ্যালিলি: বিজ্ঞানের ভিত্তি গড়েছেন যিনি

| ২৬ ফাল্গুন ১৪২১ | Tuesday, March 10, 2015

গ্যালিলিও গ্যালিলি: বিজ্ঞানের ভিত্তি গড়েছেন যিনি৩৭৯ বছর আগের কথা। জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রপথিক এবং মানব ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রকে তার কর্মে স্বীকৃতি পাওয়ার পরিবর্তে দাঁড়াতে হয়েছিল আসামির কাঠগড়ায়। কারণ তিনি সৌরকেন্দ্রিক বিশ্ব মডেলকে সমর্থন করেছিলেন। তার আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ দিয়ে এ সমর্থনের পক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি হলেন মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি। পড়ন্ত বস্তুর সূত্রের জন্য আমরা সবাই তাকে চিনি। ৯ বছরের গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার দোষ ছিল নিজের তৈরি করা টেলিস্কোপ দিয়ে দেখিয়েছিলেন সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘোরে। কিন্তু ধর্ম-আদালতের চাপে তাকে স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়েছিল তিনি ‘যা বলেছেন তা ভুল’। তার পরও বিড়বিড় করে বলেছিলেন, ‘আমাদের বলা না বলাতে কিছু আসে যায় না, তবুও পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।’
ইতালীয় এই পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে টেলিস্কোপের উন্নতি সাধন। এই যন্ত্রের বিকাশ সাধন বিভিন্ন ধরনের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, নিউটনের গতির প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র এবং কোপারনিকাসের মতবাদের পক্ষে অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। তাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। স্টিফেন হকিংয়ের মতে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এত বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেননি। অ্যারিস্টটলীয় নিশ্চল পৃথিবীর ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর আবিষ্কারই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। গ্যালিলিওর জন্ম ১৫৬৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। গ্যালিলিওর মৃত্যুদিনে জন্মেছিলেন বলে গর্ববোধ করেন হকিং। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি ছিল গ্যালিলিওর ৩৭৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। আর কৃষ্ণবিবর ও কোয়ান্টাম মহাকর্ষের গবেষক স্টিফেন হকিংয়ের ৭৩তম জন্মদিন। জ্যাকব ব্রুনোস্কি তার দ্য অ্যাসেন্ট অব ম্যান বইতে লিখেছেন, ‘১৫৬৪ সালে পৃথিবীতে দুই মহামনীষীর আবির্ভাব হয়েছিল। এক. ইংল্যান্ডে শেকসপিয়র, দুই. ইতালিতে গ্যালিলিও।
তের খণ্ডের ওই বইতে ‘দ্য স্টারি ম্যাসেঞ্জার’ শীর্ষক অধ্যায়ে (যা গ্যালিলিওর গ্রন্থের নামানুসারে) ব্রোনোস্কি বলেন, শেকসপিয়র যখন সমাজকে নাটকের আয়নায় তুলে আনছেন, একই সময় বাস্তববাদী গ্যালিলিও মগ্ন বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি গড়ায়।
ইতালির পিসা শহরে এক দরিদ্র পরিবারে গ্যালিলিও গ্যালিলি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি গণিতজ্ঞ এবং সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। মায়ের নাম গিউলিয়া আমানাটি। গ্যালিলিও ছিলেন বাবা-মায়ের ৬ সন্তানের মধ্যে বড়। পিসা শহরেই তিনি চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে লেখাপড়া করতেন। একদিন গ্যালিলি জ্যামিতি বিষয়ে একটি বক্তৃতা শোনেন। এরপরই তিনি অঙ্কশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। এই ঘটনাই তার জীবনের গতিপথ বদলে দেয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। দরিদ্রতার জন্য তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি। মাঝপথেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই ভৌতবিজ্ঞানের নিয়মগুলোর ওপর কিছু অসাধারণ তত্ত্ব ও চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করেন। ফলে ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিনি একের পর এক শিক্ষকতার চাকরি পেতে থাকেন।
বিজ্ঞান ছাড়াও তিনি সঙ্গীত সাধনা করতেন। নিজ প্রচেষ্টায় বীণাবাদক হয়েছিলেন। বাবার কাছ থেকেও তামিল নেন। বিজ্ঞানে পরিমাণগত পরিমাপ পদ্ধতির গোড়াপত্তনে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। তার এই পরিমাপ ফলগুলো গাণিতিক সূক্ষ্মতার বিচারে উত্তীর্ণ হয়েছিল। বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ আবিষ্কারের পর ১৬১০ সালে প্রকাশিত ‘দ্য স্টারি ম্যাসেঞ্জার’ বইটিতে লেখেন :
‘আমি অসংখ্য নক্ষত্র দেখেছি যা আগে কখনও দেখা যায়নি এবং যার সংখ্যা আগের পরিচিত নক্ষত্রের তুলনায় দশগুণের বেশি। কিন্তু যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি বিস্ময়ের উদ্রেক করবে এবং যেটা আমাকে সমস্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে, তা হচ্ছে আমি এমন চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেছি, যা আমার আগে কোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানী জানতেন না বা দেখেননি।’

 

লেখক: আসিফ

২৫ জানুয়ারি ২০১৫ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত